সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করলো সরকার

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রতিবেশের সুরক্ষায় পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। উপদেষ্টা পরিষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এতে বলা হয়, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে কোনো পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। তারা রাত্রেও অবস্থান করতে পারবেন প্রবাল দ্বীপটিতে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিনে সরকার পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখবে। এ সময়ে সেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সেন্টমার্টিন কোরাল দ্বীপ। পরিবেশ ঠিক রাখার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব সেন্টমার্টিন গড়ার চিন্তা থেকে এই পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে। সিঙ্গেল প্লাস্টিক সেন্টমার্টিন নিয়ে যাওয়া স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে। দিনে দুই হাজার পর্যটক কীভাবে নির্ধারণ করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যটকরা যখন যাবেন তখন নাম্বারিং করা হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, বছরের অন্যান্য মাসের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মূলত এ সময়ে পর্যটকদের চাপ অনেক বেশি থাকে সেজন্য এই চার মাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিই সরকারের বক্তব্য। উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল সাধারণত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে এটি শুরু হয়। চলে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। অন্য সময় ট্রলার, স্পিডবোট ব্যবহার করে জরুরি কাজে সেন্টমার্টিন ব্যবহার করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি ও নাইম আলী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ৭ই অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই প্রবাল দ্বীপ আমাদের দেশে একটিই আছে, তাই একে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তার আগে ২০২২ সালের ৭ই জানুয়ারি সমুদ্র সম্পদের টেকসই আহরণের লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ‘সেন্টমার্টিন মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া’ ঘোষণা করে শেখ হাসিনা সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে তখন বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে হুমকির মুখে থাকা প্রবাল, গোলাপী ডলফিন, হাঙ্গর, রে মাছ, সামুদ্রিক কাছিম, সামুদ্রিক পাখি, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্য এবং এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ; সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই আহরণের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকার মানোন্নয়ন; ব্লু ইকোনমি সমৃদ্ধকরণ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৪) অর্জনের লক্ষ্যে এই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।(মোঃ মিছবাহ উদ্দিন)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *