ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধের প্রভাব ক্রমেই তীব্র হয়েছে।হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।তবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামেইশ নামের শহরের বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে,তারা তাদের শহর ছেড়ে যাবেন না।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাসের আকস্মিক হামলার পর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তরে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে।প্রতিউত্তরে ইসরায়েল লেবাননে হামলা চালায়।১ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের স্থল হামলার ফলে যুদ্ধ আরও ঘনীভূত হয়।রামেইশের বাসিন্দারা চারপাশে গোলাগুলি এবং আকাশপথে রকেট চলাচল সত্ত্বেও তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে অস্বীকার করেছেন।তারা বলছেন,তাদের এই সিদ্ধান্ত তাদের পরিচয় এবং দেশের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার জন্য।
রামেইশ শহরটিতে প্রায় ৭,০০০ জন মারোনাইট খ্রিস্টান বাস করেন।যুদ্ধের কারণে শহরের ৯০% বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাচ ভেঙে গেছে,দেয়ালে ফাটল ধরেছে।কৃষক জিরিস আল-আলাম জানান,এয়ার স্ট্রাইকের কারণে রাতে কেউ ঘুমাতে পারে না। যদিও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি,হামলায় তার ২০০টি গবাদি পশু মারা গেছে।
রকেট হামলার কারণে কিছু পরিবার তাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।রাশা মাখবুরের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তার পরিবার শহরের কেন্দ্রে অন্য একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে সাধারণ মানুষকে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।কিন্তু রামেইশ শহরের বাসিন্দাদের সরাসরি সরিয়ে নেওয়ার কোনো নির্দেশ দেয়নি।
অক্টোবরের শেষদিকে রামেইশ থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও দুর্বল করে দেয়।ইউনিফিলের সহায়তায় একটি ত্রাণ কাফেলা শহরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।কিন্তু জ্বালানি, খাদ্য, এবং ওষুধের সংকট এখনও চরমে।ফাদার আল-আমিল এবং মেয়র আশা করছেন,দ্রুত রাস্তাটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হবে।এবং তারা শহর ছেড়ে কোথাও যাবন না।তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
রামেইশ শহরের নাগরিকরা তাদের জীবন এবং ঐতিহ্য রক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।চরম সংকট এবং যুদ্ধে ঘেরা থাকা সত্ত্বেও, তাদের এই সাহস অনুপ্রেরণার উৎস।তারা বলছেন, প্রয়োজনে তারা তাদের ঘরেই মৃত্যুবরণ করবেন, তবুও শহর ছেড়ে যাবেন না। তথ্যসূত্র : বিবিসি(মাহমুদুল হাসান)