ইসরায়েল সরকার হামাসের সাথে নতুন করা গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি অনুমোদন করেছে। এর ফলে রবিবার থেকেই এটি কার্যকরের পথ তৈরি হলো।
কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পর চুক্তিটি অনুমোদন করা হলেও দুজন কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী এই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
এর আগে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা চুক্তিটি অনুমোদনের সুপারিশ করে । প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে যে ‘এটি যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনকে সমর্থন করে’।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং হামাস উভয়েই চুক্তির বিস্তারিত চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর এই ঘোষণা এলো।এর দুদিন আগে মধ্যস্থতাকারী কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশর যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলো।
চুক্তি অনুযায়ী হামাসের হাতে থাকা ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দি বিনিময় হবে।
একই সাথে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি পাবে। পাশাপাশি ত্রাণবাহী লরিগুলোকে প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাকী জিম্মিরা মুক্তি পাবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হবে। এর মাধ্যমে ‘টেকসই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’।
আর তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে গাজা পুনর্গঠন হবে- যা শেষ করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। একই সাথে মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হবে।কাতার জানিয়েছে প্রথম ধাপে যেসব জিম্মি মুক্তি পাবেন তার মধ্যে থাকবেন ‘বেসামরিক নারী, নারী সেনা, শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ ও আহত বেসামরিক নাগরিকরা’।
ইসরায়েল বলছে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে তারা তিন জন জিম্মির মুক্তি আশা করছে। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে ছয় সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট দলে জিম্মিরা মুক্তি পাবে।
ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর ১২শ ব্যক্তিকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার জবাবে হামাসকে ধ্বংস করতে সামরিক অভিযান চালাচ্ছিল দেশটি। সংগঠনটিকে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও আরও কিছু দেশ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।
এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮৭০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আরও প্রায় ২৩ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হয়েছে। সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া খাদ্য, জ্বালানি, ঔষধ ও আশ্রয়ের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল বলছে হামাসের হাতে এখনো ৯৪ জন জিম্মি আছে। এর মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে যুদ্ধের আগে চারজন ইসরায়েলি সেনাকে অপহরণ করা হয়েছিলো, যার মধ্যে দুজন মৃত।
চুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারে ভোটের আগে সংস্কৃতি মন্ত্রী মিকি জোহার বলেন: “এটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত, কিন্তু আমরা সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ আমাদের কাছে সব শিশু ও নারী ও পুরুষকে ঘরে ফিরিয়ে আনাটা গুরুত্বপূর্ণ”।
“আমরা আশা করি ভবিষ্যতে গাজায় আমাদের কাজ শেষ করতে আমরা সক্ষম হবো,” বলছিলেন তিনি।(মোঃ আব্দুল বাতেন)