ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল ‘ভুয়া’: বলেছেন ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ড. ইউনূস বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার অধীনে তার দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি “ভুয়া” এবং তিনি যা বলেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন না করার জন্য বিশ্বকে দোষ দিয়েছেন। তার দুর্নীতি ছিল। কয়েক সপ্তাহের সহিংস বিক্ষোভের পর হাসিনা প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

হাসিনাকে তার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন অর্থনীতি এবং দেশের বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে দমন করার অভিযোগ করেছেন।

হাসিনা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে শাসন করেছিলেন, সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের সন্দেহে তদন্ত করা হচ্ছে এবং ঢাকা নয়াদিল্লিকে তাকে হস্তান্তর করতে বলেছে।

হাসিনা এবং তার দল অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছে, অন্যদিকে নয়াদিল্লি প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

সুইস আলপাইন রিসোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, “তিনি দাভোসে সবাইকে বলছিলেন কিভাবে একটি দেশ চালাতে হয়। কেউই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি।” “এটি মোটেও ভাল বিশ্ব ব্যবস্থা নয়।”

“এটি ঘটানোর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। তাই এটি বিশ্বের জন্য একটি ভাল শিক্ষা,” তিনি বলেছিলেন। “তিনি বলেছিলেন, আমাদের বৃদ্ধির হার অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। জাল বৃদ্ধির হার, সম্পূর্ণ।”

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের অর্থনীতি ও বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরে দাঁড় করানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয় শেখ হাসিনাকে। যদিও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে দমন করার অভিযোগ করেছেন।

ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, দুর্নীতি এবং অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাকে হস্তান্তরে দিল্লির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। তবে শেখ হাসিনা ও তার দল কোনো ধরনের ভুল করার কথা অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

সুইজারল্যান্ডের আলপাইন রিসোর্টে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) দাভোসে সবাইকে বলছিলেন কীভাবে একটি দেশ চালাতে হয়। কিন্তু কেউই সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এটি মোটেও ভালো বিশ্ব ব্যবস্থা নয়।

ইউনূস বলেন, এর জন্য পুরো বিশ্ব দায়ী। যে কারণে বিশ্বের জন্য একটি ভালো শিক্ষা এটি। তিনি আরও বলেন, হাসিনা বলেছিলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এটা একেবারে ভুয়া প্রবৃদ্ধির হার।

কেন তিনি এই প্রবৃদ্ধির হারকে ভুয়া বলে মনে করেন সে বিষয়ে রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে ব্যাপক-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব ও সম্পদের বৈষম্য কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দৃঢ় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি এবং তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে এই সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন ড. ইউনূস। আন্দোলনকারী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং নিজের মেয়াদকালে হাসিনা যেসব অপরাধ করেছেন সেজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চান তিনি।

এই কঠিন সময়ে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্থল সীমানার প্রায় পুরোটাই ভারতের সাথে।(মাহমুদুল হাসান)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *