‘ধন্যবাদ’ মুশফিক

মাঠে নামার আগে মোহামেডানের ক্রিকেটাররা ‘গার্ড অব অনার’ দিলেন মুশফিকুর রহীমকে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সতীর্থদের থেকে দারুণ এক সম্মাননা নিয়ে তিনি খেলতে নামলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচ। এদিন দলের হয়ে ব্যাট করার সুযোগ হয়নি তার। তবে দলের জয়ের পর মুশফিককে ঘিরে হলো উদযাপন। কাটা হলো কেকও। হ্যাঁ, আগের রাতে সবাইকে খানকিটা অবাক করে দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন মুশফিক। আর সে কারণেই তাকে মাঠে প্রিমিয়ার লীগে তার দল জানালো এমন বিদায়ী সম্মাননা। এই ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তাকে সাবেক, বর্তমান ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টজন, ভক্ত এমনকি সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও তাকে ধন্যবাদ দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এখনো তিনি একেবারেই ক্রিকেটকে বিদায় বলেননি, খেলবেন টেস্ট ক্রিকেটে। এর আগে অবশ্য টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের কথা জানিয়েছিলেন। এবারও ওয়ানডে থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন একই ভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তবে তার এই বিদায়টা আরো মধুর ও সম্মানের হতে পারতো বলেই মানে করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও উইকেটকিপার-ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট। জাতীয় দলে তারই জায়গাটা দখল করেছিলেন মুশফিক। লম্বা ক্যারিয়ারে দলের জন্য রেখে গেছেন অনেক অবদান। যে কারণে তার বিদায়টা মাঠ থেকেই আশা করেছিলেন পাইলট। তিনি বলেন, ‘মুশফিক বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডে ফরম্যাটে সেরা ব্যাটারদের একজন। ২০০৬ থেকে শুরু, প্রায় ১৯ বছর। সেই হিসেবে আমি বলবো তার বিদায়টা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই হতে পারতো। ভূমিকাটা আগে থেকেই রাখতে পারতেন নির্বাচকরা। তাকে নিয়ে দলের পরিকল্পনা কি সেটি নিয়ে আগে থেকে আলাপ করা থাকলে হয়তো স্মিথেরে মতোই তার বিদায়টা হতো।’ অন্যদিকে মুশফিকুর রহীমের বিদায়ে কাউকে আক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। কারণটা সবারই জানা। কারণ ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা তেমন ফর্মে নেই মুশফিক। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তার বাজে পারফরম্যান্সের পর বেশ জোড়ালো ভাবেই শুরু হয় সামালোচনা। এরপর হঠাৎ করেই তিনি অবসরের ঘোষণা করেন। যদিও সবাই ধারণা করছিল তার আগে হয়তো অবসর ঘোষণা করবেন মাহমউদুল্লাহ রিয়াদ। তবে তার ভায়রা সেই পথে হাঁটেননি। দু’জনেই ছিলেন জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। মাহমুদউল্লাহ শুধু খেলছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিকে তিনি আগেই বিদায় বলেছেন। আর মুশফিক যখন ওয়ানডে ফরম্যাটকে বিদায় বললেন তখন ৩৮ ছুঁইছুঁই ক্রিকেটার দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে রানের মালিক (২৭৪ ম্যাচে ৭৭৯৫ রান)। ক্রিকেটপ্রেমীরা বলতে শুরু করেছিলেন অনেক হয়েছে। কিন্তু তিনি কি সেটি অনুভব করতে পারেননি! নাকি খেলা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন! এ নিয়ে পাইলট বলেন, ‘মুশফিক বলেন আর মাহমুদউল্লাহ তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা খেলার মধ্যে আছেন যে কারণে হয়তো কখন থামতে হবে সেটি বুঝতে পারছিলেন না। লম্বা সময় তাদের বিকল্পও তৈরি হয়নি। যে কারণে তাদের মধ্যে অবসরের চিন্তাটা না আসা স্বাভাবিক। এখানে নিবার্চকরা বা ক্রিকেট বোর্ড পারতো তাদের নিয়ে আলোচনা করতে। সেটি হলে মুশফিকের বিদায়টা আরো সুন্দর হতো। আমার ধারণা স্মিথ যে অবসরে গেছে সেটি হঠাৎ করে হয়নি। তিনি আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়ার।’

বুধবার রাত ১১টায় ফেসবুক পোস্ট দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন মুশফিক। প্রায় ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে চড়াই উতরাই, উত্থান পতন, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সঙ্গী হয়েছিল এই কিপার-ব্যাটারের। বিদায়ের ঘোষণার পর সতীর্থ ও ভক্তরা দেশের ক্রিকেটে অবদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ মুশফিকের অবদান স্মরণ করে বলেন, মুশফিকের অধ্যবসায়, প্রতিশ্রুতি ও লড়াকু মানসিকতা তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের গৌরবময় মুহূর্তগুলোর কথা বললে তার নাম বারবার উঠে আসবে। ১৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা এক অসাধারণ কীর্তি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্রিকেটার মুশফিক। এবার টেস্ট ক্রিকেটেও তার দারুণ শেষ প্রত্যাশা করেন তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘এখনো তুই একটি সংস্করণে খেলবি- টেস্ট সংস্করণ। আমি সত্যিই আশা করি ও প্রার্থনা করি, তুই ভালো কর। অন্তত ১০০টি টেস্ট খেল, যেটা বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটার খেলে নাই। আমি এটা আশা করব, ১০০তম টেস্ট অবশ্যই খেলবি। খুব আবেগপ্রবণ লাগছে, যেটা আমি টের পাচ্ছি, তুইও পাচ্ছিস। বাংলাদেশ তোকে মিস করবে। যা কিছুই করেছিস তুই দেশের জন্য, অনেক অনেক বছর সেসব মনে রাখা হবে, ধন্যবাদ, সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ মুশফিক।’(মাহবুবুল ইসলাম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *